সাবিত আল হাসান:
করোনার প্রাদুর্ভাবে নারায়ণগঞ্জের মাছের বাজারে তুলনামূলক নজরদারী কমে যাওয়ায় ধীরে ধীরে বাজারে ছড়িয়ে যাচ্ছে জাটকা মাছ। এসকল মাছ বিক্রি করায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় কৌশলে মাছ বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে চাপিলা মাছ হিসেবে পরিচয় করান। ২ শত থেকে ৩ শত টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে জাটকা। ফলে ক্রমশই ধ্বংস হচ্ছে আগামীর বড় ইলিশ। অথচ সরকার থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত সারাদেশে জাটকা আহরণ, বিক্রি পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশের নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ব্যস্ত থাকায় নদীতে প্রতিনিয়ত জাল ফেলে জাটকা মাছ ধরছে জেলেরা। চাঁদপুর, সোনারগাঁ থেকে এসকল মাছ প্রতিনিয়ত নারায়ণগঞ্জের বাজারে। স্পিডবোট, ট্রলার যোগে নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে সমগ্র জেলায় ছড়িয়ে যাচ্ছে জাটকা মাছের চালান। প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ারা সুযোগ শহরের বড় বড় বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করতেও দ্বিধাবোধ করছে না পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা।
নারায়ণগঞ্জ শহরের ৫ নং মাছ ঘাট এলাকায় জাটকা বিক্রি করতে থাকা বিক্রেতা মনসুর আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই জাটকা মাছ আসে বিভিন্ন ভাবে। পাইকাররা নাকি পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসকল মাছ নিয়ে আসে শহরে। নদীতে জাটকা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিলে এখানে তো বিক্রি করা সম্ভব হয়না। যদি মাছ ধরা বন্ধ না হয় তাহলে বাজারে বাজারে অভিযান চালিয়ে কোন লাভ হবে না। কেউ কেউ গোপনে অলিগলিতে নিয়ে বিক্রি করবেই।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১০ ইঞ্চির ছোটো সাইজের ইলিশ জাটকা হিসেবে পরিচিত। বছরের ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরন, সংরক্ষন এবং বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসময়ে কেউ জাটকা ধরা, বিক্রি, মজুত ও পরিবহন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদ- অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে।
সোনারগাঁয়ের কাউক্কারটেক এলাকার জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসনের কঠোর অভিযান না থাকায় প্রতিরাতেই জেলেরা জাটকা ধরতে মেঘনায় যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা জারির শুরুর দিকে কোস্টগার্ডের অভিযান চললেও পরে তা অনেকটাই স্তিমিত হয়ে যায়। এই সুযোগেই মূলত জেলেরা নদীতে ফিরে আসে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারনে নদীগুলোতে প্রশাসনের নজরদারিও নেই বললেই চলে।
কোস্টগার্ড পাগলা স্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত জাটকা ধরলে সেসব বিতরনের একটা ব্যবস্থা আমাদের করতে হয়। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারনে আমরা সেসব বিতরন করতে পারিনা। সেই কারনে এবং সারাদেশেই যেহেতু খাদ্য সংকটের একটি ব্যাপার বিরাজমান সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে কেউ কেউ। যেহেতু আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি জাটকা আসছে সেহেতু আমরা দ্রুতই গজারিয়া স্টেশনকে বিষয়টি অবগত করবো। সেখান থেকে জাটকা মাছ যাতে জব্দ করে সেই ব্যাপারে আমাদের নির্দেশনা থাকবে
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ নৌ পুলিশের পরিদর্শক আবদুল হাকিম বলেন, বর্তমানে জাটকা নদী থেকে খুব কমই আসে। যেটুকু আসে তা যাত্রাবাড়ী থেকে নিয়ে আসে বিক্রেতারা। তবে যদি কোন ভাবে আমরা খবর পাই জাটকা এসেছে তাহলে আমরা অবশ্যই সেসব মাছ জব্দ করবো। কোন ভাবেই এক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার সুযোগ আমাদের নেই। তবে মাছ বাজারে উঠলে মৎস অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উচিৎ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা। তারা মোবাইল কোর্ট চালালে এক্ষেত্রে আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগীতা থাকবে।
(আগামী প্রতিবেদনে জাটকা পাইকারদের তথ্য তুলে ধরা হবে)